অদ্রিজা- কি ব্যাপার আপনাদের বাবা ছেলের যখন তখন কান্না করার রোগ আছে নাকি? তাহলে তো ভালোই হলো আমার জন্যে। আপনাদের চোখের জলেই আমার ঘরের কাজ হয়ে যাবে। এক্সট্রা করে জলের বিল দিয়ে জল ধরে রাখতে হবে না।
এই বলে অদ্রিজা হাসতে লাগলো।
রাজ পাশে তাকিয়ে দেখলো অদ্রিজা দুই মগ কফি হাতে দাড়িয়ে আছে।
রাজ- আপনি কখন আসলেন?
অদ্রিজা- আপনি যখন সরকারি দামে চোখের জল বয়ে যেতে দিচ্ছিলেন।
বলেই অদ্রিজা মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। এই প্রথম রাজ খেয়াল করলো অদ্রিজা হাসলে তার গালে টোল পরে। যা এই জ্যোৎস্নাময় রাতে অদ্রিজাকে আরো অসাধারন করে তুলছিলো। রাজ নিজেকে সামলে নিয়ে অদ্রিজার কাছ থেকে একটা কফির মগ নিয়ে চুমুক দিলো।
রাজ- থ্যাংকস, এখন এই কফিটার অনেক দরকার ছিল। বাই দা ওয়ে কফিটা ভালো হয়েছে।
অদ্রিজা- থ্যাংকস দেওয়ার কিছু নেই এখানে। নিজের জন্য করতে মন চাইছিলো, তাই আপনার জন্যেও করে নিয়ে আসলাম।
রাজ- আচ্ছা অদ্রিজা, আপনার কি খারাপ লাগছে না এইভাবে কোন আড়ম্বর ছাড়া হঠাৎ করে বিয়ে করাতে? প্রত্যেক মেয়ের তো তার বিয়ে নিয়ে অনেক ফ্যান্টাসি থাকে। সেখানে আপনার তো কিছুই হলোনা।
উদাস নয়নে অদ্রিজা দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
অদ্রিজা- রাজ আমার জীবনে ফ্যান্টাসি বলতে কিছুই ছিলোনা। বাকিটা নাহয় আস্তে আস্তে জানতে পারবেন। একদিনে যদি সব জেনে ফেলেন তাহলে সারা জীবন আর কিছুই জানার থাকবে না। তবে একটা জিনিস ঠিক আমি বিয়ের পরের রীতিনীতি গুলো মিস করছি যা হয়তো আমার শ্বাশুরি মা থাকলে ঠিকই করতেন।
অদ্রিজার কথা শুনে আমার নিজের কাছে খুব খারাপ লাগলো। আসলেই তো ঠিক বলেছে সে। কোন রীতিনীতি পালন করা হয় নি আজ যা আজ থেকে চার বছর আগে আমি করেছিলাম কাউকে নিয়ে।
অদ্রিজা- কি হলো? আবার কোথায় হারিয়ে গেলেন?
রাজ- অদ্রিজা কিছু মনে করবেন না। আমার কিছুদিন সময় লাগবে নিজেকে ফিরে পেতে। ততদিন না হয় আমরা বন্ধু হয়ে একে অপরকে জানার চেষ্টা করলাম। একজন আরেকজনের দুঃখগুলোকে ভাগ করে নিলাম।
অদ্রিজা- রাজ আপনি কি পাগল? আমি তো অলরেডি আপনাকে আমার বন্ধু হিসেবে মেনে নিয়েছি। আর তাই আপনার সাথে বন্ধু হিসেবে কথা বলছি।
আমি অবাক হয়ে গেলাম অদ্রিজার কথা শুনে। কিভাবে সে আমার সাথে তাল মিলাচ্ছে। এই সবই কি স্বপ্ন নাকি সত্যি? যদি স্বপ্ন হয় তাহলে আমি চাইনা এই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাক।
অদ্রিজা- রাজ আমি কিছু লিস্ট করেছি। কাল সকালবেলা আপনাকে সেগুলো আনতে হবে।
রাজ- হুম নিয়ে আসবো। আচ্ছা আপনি কি রান্না বান্না কিছু পারেন? অবশ্য না পারলে প্রবলেম নেই। বুয়া এসে রেঁধে দিয়ে যাবে।
অদ্রিজা দেখি আমার কথা শুনে হা হা করে হাসতে লাগলো।
অদ্রিজা- না মশাই বুয়ার রান্না করতে হবে না। আমি মোটামুটি সব রান্নাই পারি। আর আমার সংসারে বাইরের লোক রান্না করবে কেন? আপনার কথা জানিনা কিন্তু বাবাকে আর আমি বুয়ার হাতের রান্না খেতে দিবনা।
অদ্রিজার কথা শুনে রাজ মুচকি হাসতে লাগলো।
রাজ- অদ্রিজা পরিস্থিতি মানুষকে সবকিছু সহ্য করে নিতে বাধ্য করে। তাই এখন আমার বুয়ার রান্না খেতে অসুবিধা হয়না।
অদ্রিজা- আচ্ছা আপনি এতো গম্ভীর টাইপ কথা বলেন কেন? একটু কি স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারেন না?
রাজ- বললাম তো আমার কিছুদিন সময় লাগবে নিজেকে ফিরে পেতে। তখন আবার বলবেন নাতো আমি গম্ভীর হিসেবেই ভালো ছিলাম?
বলেই রাজ হাসতে লাগলো। অদ্রিজা সেই হাসির দিকে অপলক নয়নে তাকিয়ে রয়েছে। এই সেই মন মাতানো হাসি। যার নেশায় পরে সবাইকে অগ্রাহ্য করে রাজকে বিয়ে করেছে আজ।
অদ্রিজা- রাজ একটা কথা বলবো আপনাকে?
রাজ- হুম অবশ্যই।
অদ্রিজা- সব সময় হাসি খুশি থাকবেন। নিজেকে আর কষ্ট দিয়ে গম্ভীর হয়ে থাকবেন না। আর এখন তো আমরা স্বামী স্ত্রী। আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন।
রাজ অদ্রিজার দিকে তাকালো। অদ্রিজার দুই চোখ কোন কিছু পাওয়ার আকুল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে। রাজ আস্তে করে নজর ফিরিয়ে নিলো।
রাজ- হুম চেষ্টা করবো। আর আপাতত আপনি করেই বলি। সময় আসুক আপনার বাঁধন ভেঙ্গে আপনাকে নাহয় তুমি করে নিবো। আপনি চাইলে আমাকে তুমি করে বলতে পারেন। কোন প্রবলেম নেই।
বলেই রাজ মুচকি হাসতে লাগলো।
অদ্রিজা- রাজ আমি সেই দিনটার অপেক্ষায় থাকবো যেদিন আপনির বাঁধন ভেঙ্গে আপনার তুমি করে নিবেন। আর রইলো আপনাকে তুমি করে বলা সেটা আমার পক্ষে কখনো সম্ভব নয়। আমি সব সময় আপনি করে বলে যাবো আপনাকে। কারন আমার এই আপনি ডাকটার ভিতর রয়েছে আপনার প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা আর……
রাজ- আর?
অদ্রিজা- আর বাকিটা নাহয় সময় বলে দিবে।
(চলবে)
কিছু কথাঃ অনেক বছর বাস্তবতার কারনে এই লেখালেখির জগৎ থেকে বাইরে ছিলাম। তাই হয়তো অনেক বানান ভুল হতে পারে। যা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। জানিনা আমার এই কাম ব্যাক গল্পটা আপনাদের কেমন লাগছে। কমেন্টের মাধ্যমে তা জানালে খুশি হবো। আপনাদের রেসপন্সের উপর নির্ভর করে প্রতিদিন একটি করে পর্ব দিব। সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
Leave a Comment